প্রথম নারী হিসেবে দ্বিতীয়বার বুকার জয়ী হিলারি ম্যানটেল
নু র জা হা ন রু না

হিলারি ম্যানটেল এবং তার উপন্যাস নিয়ে পরে বলছি, আগে পাঠকের জানার সুবিধার্থে ‘বুকার’ পুরস্কার নিয়ে কিছু কথা।
ব্রিটেনের সাহিত্যে সর্বোচ্চ পুরস্কারের নাম ‘বুকার’ পুরস্কার। এর বর্তমান নাম ‘দ্য ম্যান বুকার প্রাইজ ফর ফিকশন’। ১৯৬৯ সালে বুকার পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। এর প্রবর্তক হচ্ছে যুক্তরাজ্যের বুকার ম্যাক কোলেন কোম্পানি। পুরস্কারের বর্তমান অর্থমূল্য ৫০ হাজার পাউন্ড। ১৯৬৯ সালে প্রথম বুকার পুরস্কার লাভ করেন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক পার্সি হাওয়ার্ড নিউবে তার ‘সামথিং টু অ্যানসার ফর’ উপন্যাসের জন্য। প্রথম নারী হিসেবে বুকার বিজয়ী হচ্ছেন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক বার্নিস রুবিনস তার ‘দি ইলেকটেড মেম্বার’ উপন্যাসের জন্য, ১৯৭০ সালে।
হিলারি ম্যানটেল ও তার সাহিত্যকর্ম
হিলারি ম্যানটেলের পুরো নাম হিলারি মেরী থম্পসন। ১৯৫২ সালের ৬ জুলাই ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের গ্লোসপে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। হিলারি ম্যানটেলের বাবার নাম হেনরি থম্পসন এবং মা মার্গারেট থম্পসন। তাদের পূর্বসূরিরা আইরিশ হলেও হিলারির বাবা-মা ইংল্যান্ডেই জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় রোমান ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবনের শুরু। হিলারির ১১ বছর বয়সে তার বাবা-মার বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর হিলারির সত্ বাবা জ্যাক ম্যানটেলের পদবি গ্রহণ করে হিলারি ম্যানটেল নাম ধারণ করেন তিনি।
১৯৭০ সালে হিলারি ম্যানটেল আইন বিষয়ে পড়ার জন্য ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স’-এ অধ্যয়ন শুরু করেন। পরে তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড’-এ স্থানান্তরিত হন এবং ১৯৭৩ সালে ‘জুরিসপ্রুডেন্স’ অর্থাত্ মানবিক আইনের বিজ্ঞান ও দর্শনে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর ম্যানটেল একটি হাসপাতালের সমাজকর্ম বিভাগে কাজ করেন এবং পাশাপাশি একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭২ সালে হিলারি ম্যানটেল বিয়ে করেন। তার স্বামীর নাম গ্যারাল্ড ম্যাকইউয়েন। তিনি একজন জিওলজিস্ট। ১৯৭৪ সালে হিলারি ফরাসি বিপ্লব নিয়ে একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেন, যা পরে ‘অ্যা প্লেস অব গ্রেটার সেফটি’ নামে প্রকাশিত হয়।
১৯৭৭ সালে হিলারি স্বামীর চাকরি সূত্রে বতসোয়ানায় পাড়ি জমান। পরে সেখান থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় গিয়ে থাকেন চার বছর। সে সময় ‘সামওয়ান টু ডিসটার্ব’ নামে তার একটি স্মৃতিকথা প্রকাশিত হয়। হিলারি ম্যানটেলের প্রথম উপন্যাস ‘এভরি ডে ইজ মাদার’স ডে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এর পরের বছরই এই উপন্যাসের সিক্যুয়াল ‘ভ্যাকেন্ট পজেশন’ প্রকাশিত হয়। এরপর আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন তিনি। আসার পর ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ‘দ্য স্পেকটেটর’ নামে চলচ্চিত্র সমালোচনা লেখা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘এইট মান্থস অন গাজা স্ট্রিট’ উপন্যাসটি। যেখানে তিনি সৌদি আরবে তার প্রথম দিকের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেন। উপন্যাসটি ইসলাম ও পশ্চিমা মূল্যবোধের মধ্যে বিরোধ নিয়ে তার উদ্বেগকে উপজীব্য করে লেখা।
হিলারি ম্যানটেলের ‘ফ্লুড’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। এই উপন্যাসটির জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এরপর ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘অ্যা প্লেস অব গ্রেটার সেফটি’ উপন্যাসটি। যার জন্য তিনি ‘সানডে এক্সপ্রেস বুক অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারটি অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘অ্যা চেঞ্জ অব ক্লাইমেট’ উপন্যাসটি। ‘অ্যান এক্সপেরিমেন্ট ইন লাভ’ হিলারির এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। যেটির জন্য তিনি ‘হথ্রনডেন প্রাইজ’ লাভ করেন।
এরপর ২০০৩ সালে ম্যানটেলের স্মৃতিকথা ‘গিভিং আপ দ্য ঘোস্ট’ প্রকাশিত হয়। যেটি ‘মাইন্ড’-এর ‘বুক অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জয় করে। ওই বছরই তার ছোট গল্প সংকলন ‘লার্নিং টু টক’ প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘বিয়ন্ড ব্ল্যাক’ উপন্যাসটি, যা অরেঞ্জ পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নেয়।
হিলারি ম্যানটেল ২০০৯ সালে ‘উলফ হল’ উপন্যাসের জন্য প্রথমবার বুকার পুরস্কার জয় করেন। আর এ বছর অর্থাত্ ২০১২ সালে ওই উপন্যাসেরই সিক্যুয়াল ‘ব্রিং আপ দ্য বডিস’-এর জন্য দ্বিতীয়বার বুকার অর্জন করে প্রথম নারী হিসেবে দুবার ‘দ্য ম্যান বুকার’ পুরস্কার জয়ের খেতাব অর্জন করেন।
২০০৯ সালে বুকার জয়ী হিলারি ম্যানটেলের ‘উলফ হল’ উপন্যাসটি ষোড়শ শতকের রাজা অষ্টম হেনরির উপদেষ্টা টমাস ক্রমওয়েলের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত।
গত ১৬ অক্টোবর লন্ডনের গিল্ড হলে দ্বিতীয়বার বুকার জয়ী হিলারি ম্যানটেলের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কার প্রাপ্তির পর উচ্ছ্বসিত ম্যানটেল মজা করে বলেন, ‘একটি বুকার লাভ করতে ২০ বছর লেগেছিল। আর দ্বিতীয়টি এত দ্রুত ভাবাই যায় না। আমি জানি, আজকের রাতে এখানে দাঁড়াতে নিজেকে কেমন সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
এদিকে ২০১৫ সালে প্রকাশিত হবে হিলারি ম্যানটেলের মহাকাব্যিক ত্রয়ী উপন্যাসের শেষ খণ্ড ‘দ্য মিরর অ্যান্ড দ্য লাইট’। এরই মধ্যে অনেকেই ধারণা করছেন, তিনি তৃতীয়বারের মতোও বুকার জয় করতে পারেন। তবে এ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে ম্যানটেল দর্শক ও মনোনয়ন পাওয়া অপর লেখকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার ত্রয়ী উপন্যাসের তৃতীয় ও শেষ খণ্ড লেখার জন্য আমাকে আবার লেখালেখিতে ফিরতে হবে। তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ওই উপন্যাসের জন্য আমি আবারও এখানে দাঁড়াব, এ ধরনের কোনো আকাঙ্ক্ষা বা প্রত্যাশা আমার নেই।’
সূত্র ঃ আমার দেশ, সাহিত্য সাময়িকী।
No comments:
Post a Comment