অতএব ঘরছাড়া পথিক ফিরে এলেন আপন ঘরে। নিমগ্ন হলেন নিজস্ব লেখালেখিতে। আর
এখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে এক চমত্কার সাদৃশ্য খুঁজে পাই আমরা সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন
রাজধানী কলকাতার সব হৈ-হুল্লোড় ও রাজনৈতিক ডামাডোল থেকে অনেক দূরে। কখনও
শিলাইদহ, কখনও পতিসর, কখনও শান্তিনিকেতন আবার কখনওবা বিদেশে। কিন্তু তবুও
সমস্ত দূরত্ব অতিক্রম করে কখনও কখনও নিজেকে সঁপে দিতেন সেই রাজনৈতিক
তর্ক-বিতর্কভরা উত্তেজনার মধ্যে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ‘বঙ্গভঙ্গবিরোধী
আন্দোলন’-এর কথা বলতে পারি। সবকিছু ছেড়েছুড়ে একসময় কী মাতাটাই না মেতেছিলেন
তিনি এই আন্দোলনে! কত কিছুই না করলেন। তারপর হঠাত্ একদিন সবকিছু পিছে ফেলে
নিজের লেখার টেবিলে বসে রইলেন চুপচাপ। কেননা তখন তাঁর মনে হয়েছে রাজনীতি
নিয়ে দাপাদাপি করা, দলবেঁধে রাস্তায় নেমে মিছিল-মিটিং কিংবা গান করা তাঁর
কাজ নয়। কেননা তিনি কবি, তিনি লেখক। একমাত্র লেখাটাই তাঁর কাজ। একুশ শতকের
প্রথম দশকে এসে সুনীল যা উপলব্ধি করলেন, উনিশ ও বিশ শতকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর
জীবদ্দশায় একাধিকবার তা অনুভব করেছেন। জীবনের অপরাহ্নবেলায় এসে
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও উপলব্ধির সাদৃশ্য প্রবলভাবে অনুভব করলেও
প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে অথবা অতিক্রম করে চলাই ছিল তাঁর
কবিজীবনের সচেতন প্রয়াস। ফলে স্পর্ধিত যৌবনকালে তাঁর গায়ে রবীন্দ্রবিরোধীর
তকমাও জুটেছিল। যেমন জুটেছিল বুদ্ধদেব বসুর ললাটেও। তবে ‘তিনজোড়া লাথির
ঘায়ে রবীন্দ্ররচনাবলী লুটোয় পাপোষে’-এর মতো অবাক করা পঙিক্ত যখন লেখা হলো
সুনীলের কবিতায়, কলকাতার রবীন্দ্রপ্রেমীদের কাছে তা ঈশ্বরদ্রোহিতার মতোই এক
অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে হলো এবং রবীন্দ্রনাথ নয়—তত্কালের এই
রবীন্দ্রপ্রেমীদের ওপরই ছিল সুনীলের যত রাগ।
আর আজকের পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করলে সেই রাগকে তো স্পষ্টতই মনে হয়। চল্লিশের দশকের শেষদিকে এসে ঘটেছিল ঘটনাটি। সুনীলের কণ্ঠে তখন রবীন্দ্রনাথের গান উঠেছে। সেই গান গেয়ে তখন তিনি খানিকটা খ্যাতিও অর্জন করেছেন। মহাজাতি সদনের একটা অনুষ্ঠানে এই সময় তাঁর দলের কাছে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ এলো। যথারীতি প্রস্তুত হয়েই তাঁরা সেখানে গেলেন। মঞ্চে উঠলেন এবং গান গাওয়া শুরু করলেন। হঠাত্ কিছু দর্শক তাদের আসন থেকে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন এবং ক্রমেই তাদের সঙ্গে যোগ দিতে লাগলেন আরও অনেকে। কিন্তু মঞ্চে সুনীলরা তখনও তার কোনো কারণ ধরতে পারছেন না। তাদের গাওয়া গানের কথা ও সুরের মধ্যে কোথাও তো কোনো ভুল নেই। তবে? কিছু বুঝতে না পেরে আরও মনোযোগের সঙ্গে তারা তাদের গান চালিয়ে যেতে লাগলেন। ওদিকে দর্শকরাও সমান তালে চেঁচাচ্ছেন। আগের চেয়ে তারা এখন অনেক বেশি উত্তেজিত। একেবারে মারমুখো। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের কয়েকজন এগিয়ে এসে তাদের অতি দ্রুত পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দিলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের সরে পড়তে বললেন। তারা সবাই হতচকিত এবং হতবিহ্বল। কী তাদের অপরাধ—জানতেই পারলেন না। তবে পরে জেনেছিলেন। গান তারা ঠিকঠাকই গাইছিলেন। কিন্তু তাদের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবির বদলে ছিল শার্ট-প্যান্ট। আর হলের উত্তেজিত শ্রোতা-দর্শকদের কাছে সেটাই ছিল অপরাধ। তাদের বিচারে শার্ট-প্যান্ট পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার অর্থ হলো রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত উভয়কেই অপমান করা। এবং এরাই ছিল তখনকার রবীন্দ্র সাহিত্য ও সঙ্গীতের ধারক, বাহক, রক্ষক। এই সংকীর্ণ ধ্যান-ধারণার রবীন্দ্রপ্রেমীদের সুনীলের মতো মুক্ত মনের মানুষ যে মেনে নিতে পারবেন না—সে তো খুবই স্বাভাবিক।
তবে তাই বলে যে ভাষাভঙ্গিতে কথা বলে গেছেন, কিংবা কবিতা লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ—সে তো সম্পূর্ণই রবীন্দ্রনাথের। প্রতিটি কবি এবং কথাশিল্পীকেই তার নিজস্ব ভাষাভঙ্গি বা স্টাইল তৈরি করে নিতে হবে। গড়ে নিতে হবে নিজস্ব উপলব্ধি ও চেতনার একটা ভিন্ন জগত। দৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য। সঙ্গত কারণেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুনীলের অনেক দূরত্ব।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার মাধ্যমেই পঞ্চাশের দশকের বাংলা, বিশেষত পশ্চিমবাংলার কবিতার একটি নিজস্ব চারিত্র্য গড়ে উঠেছিল। ফলে রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রযুগের কবিতার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই তার পার্থক্যগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁদের কবিতায় কখনোই অমার্জিত কিংবা অশালীন শব্দকে প্রবেশাধিকার দিতেন না। দিতেন না তিরিশের কবিরাও। জীবনানন্দ দাশ তাঁর একটি কবিতায় এ ধরনের কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে তাঁর চাকরিটা খুইয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চাশের দশকে সুনীল ও তাঁর সহযাত্রীরা শালীন আর অশালীন শব্দের মধ্যবর্তী বিভাজন রেখাটিকেই গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানে ঈশ্বরের উপস্থিতি প্রশ্নাতীত। কিন্তু এরা তাকে করে তুললেন প্রশ্নসাপেক্ষ। শুভ সুন্দর ও কল্যাণের মূর্ত বাণীরূপই হলো রবীন্দ্রনাথের কবিতা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর সময়ের ক্ষয়ক্ষতি গ্লানি অবিশ্বাস আর দেশবিভাগের যন্ত্রণায় এদের কবিতা রক্তাপ্লুত। রাজনীতি অথবা ঈশ্বর—কোথায়ও তাদের আস্থা নেই, আশ্রয় নেই। তবে এ যুগের ধূলিধূসর অথবা ঊর্মিমুখর কিংবা নিরাশ্রয়ী জীবনে নারীপ্রেমের মহিমা ও মর্যাদাকে তারা ছোট করে দেখলেন না। কিন্তু সেই দেখার ধরনটিও আবার রবীন্দ্রনাথ থেকে আলাদা। রবীন্দ্রনাথ বরাবরই প্রেমকে জেনেছিলেন হৃদয়ের সামগ্রী। শরীর সেখানে কখনোই মুখ্য হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সুনীল পুষ্পিত নারী শরীরকেই জেনেছেন প্রেমের আধার। সেই শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়েই তাঁর প্রেম সন্ধান করেছে হৃদয়ের এবং সেই শরীর-কামনা কোথাও কোথাও এতই উদগ্র হয়ে উঠেছে যে, সমকালের সংস্কারমৃত-পাঠকরাও তাঁকে এক ‘সকাতর যৌন কামনার কবি’ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। বন্ধু শঙ্খ ঘোষকেও লিখতে হয়েছে—‘সন্দেহ নেই যে তীব্র যৌনতা তাঁর কবিতার অন্যতম বড় ভর।’
যৌনতা এমন একটা মদ, যা খুব সহজেই মাতিয়ে তোলে নারী-পুরুষকে। আর তখনই সুরের মধ্যে ঢুকে পড়ে অসুর। ‘সুন্দর ফিরিয়া যায় অসহ্য লজ্জায় অপমানে।’ কিন্তু সুনীলের কবিতায় আশ্চর্যজনকভাবে সেই ছন্দপতনটি খুব কমই হয়েছে। কামনার মদির গন্ধ ছড়িয়ে সেখানেই থেমে থাকে না তাঁর কবিতা। পৌঁছে যায় হৃদয় মন্থন করা ভালোবাসার এক ঊর্ধ্বলোকে। তাঁর ‘নীরা’ তাই সহজেই হয়ে ওঠে পাঠকদের অতি আদরের মানসসঙ্গী। সময়ের অগ্রগমনের সঙ্গে সঙ্গে কিশোরেরা তরুণ হয়। তরুণেরা যুবক এবং যুবকেরা বৃদ্ধ। নতুন প্রজন্ম এসে জায়গা দখল করে পুরনোর। কিন্তু নীরা একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তার সেই সৌরভময় পুরনো অবস্থানে। একইভাবে আনন্দ ছড়ায়, বেদনা জাগায়, সৌন্দর্য বিলায় এবং মায়ার বিভ্রমে মাতায় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। দেহকে ছুঁয়ে ছুঁয়েই সে দেহাতীত, কালাতীত এবং মরণাতীত।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম— ‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি’। এটি সুনীলের দ্বিতীয় কাব্য। এই কাব্যটিতেই সুনীল তাঁর কাব্যভাবনার নিজস্ব ভিত্তিভূমি রচনা করেছিলেন। খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর কবিযাত্রার সদর রাস্তা। সারাজীবন এই একই রাস্তা ধরে হেঁটেছেন তিনি। আর কখনোই কোনো দিকবদল করেননি। তাই দৃশত একটি কাব্যের নাম হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর সব কাব্য এবং কবিতাই তাঁর বেঁচে থাকার ধরন-ধারণ, অভিজ্ঞতা ও অনুভবের শিল্পিত দলিল।
‘যেমন হওয়া ভাল’ কিংবা ‘যেমন হওয়া উচিত’— রবীন্দ্রনাথের সমগ্র জীবনের সাহিত্য সৃষ্টি এই বোধের আঙিনা থেকে উত্সারিত হয়েছে। তাই এর সঙ্গে মিশে আছে আদর্শবাদের উজ্জ্বল আলো। মিশে আছে কল্যাণ, শুভ ও সৌন্দর্যচেতনার আলোছায়া। কিন্তু সুনীলের যাত্রা ছিল এর ঠিক বিপরীতে। জীবন ও জগতের ব্যাপ্ত পরিসরে ‘যেমন হয়ে থাকে’— রবীন্দ্রনাথ তাঁর সকল ইন্দ্রিয়কে সজাগ রেখে তা দেখেছেন এবং ‘যেমন হওয়া ভালো’র দিকে তাকে পরিচালিত করেছেন। কিন্তু ‘কেমন হওয়া ভালো’ এই বোধ সুনীলকে মোটেই তাড়িত কিংবা চালিত করেনি। তার বদলে তিনি পরিচালিত হয়েছেন ‘যেমন আছি আমি’—তারই বর্ণনায় কবিতাকে শিল্পিত করে তোলার প্রেরণায়। ফলে তাঁর সমুদয় কবিতা হয়ে থাকল তাঁরই আত্মকাহিনীর প্রতিচিহ্ন। আত্মউপলব্ধির ধারাবিবরণী। আর এই পথে নিঃশঙ্ক যাত্রার প্রেরণাটি তিনি পেয়েছিলেন এ্যালেন গিনসবার্গের কাছ থেকে। তাঁর প্রথম কাব্য ‘একা এবং কয়েকজন’ প্রকাশের পর যখন তিনি কবিতাযাত্রার একটা নতুন ও নিজস্ব পথের সন্ধান করছিলেন, তখনই তাঁর হাতে পৌঁছেছিল গিনসবার্গের একটি চিঠি, যাতে লেখা ছিল—“যা কিছু তুমি অনুভব করো, তাকে ঠিক ঠিক বলে যাওয়াটাই হলো কবিতার কাজ, যেখানে থাকবে তোমার সকল রকম স্বীকারোক্তি, সমস্ত রকম অসন্তোষ, সমস্ত রকম উচ্ছলতা। ‘কী তোমার হওয়া উচিত’ সেদিকে কিছুমাত্র লক্ষ্য না রেখে কবিতা আজ জানতে চায় তুমি ঠিক কেমন।”
গিনসবার্গের এই কথাগুলো সুনীলের মনেও ছিল—অর্ধ উচ্চারিত কিংবা অর্ধ জাগর অবস্থায়। চমত্কারভাবে গিনসবার্গ তাকে জাগিয়ে দিলেন। সেই জাগর সত্তা সুনীলকে আর থামতে দেয়নি। তাই তিনি জীবনভর নিমগ্ন থেকেছেন কবিতার সাধনায়—যে কবিতা তাঁরই যাপিত জীবন আর সংকোচহীন স্বীকারোক্তির এক শিল্পিত দলিল। অর্ধশতাব্দীব্যাপী বিস্তৃত একটি যুগের পাঠক আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে দেখলেন, সেসব স্বীকারোক্তি শুধু সুনীল নামের একজন ব্যক্তি মানুষের নয়, একই সঙ্গে তাদের জীবনেরও অনেক অভিজ্ঞতা ও অনুভবের নিকটাত্মীয়। অন্যের দর্পণে যখন নিজের ছায়া ভাসে, তখন সেই দর্পণটির জন্যও জেগে ওঠে এক ধরনের ভালোলাগা, ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার দর্পণ হয়েই সুনীলের কবিতা জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ঘর ও মনে। আগামী প্রজন্মের কবিতাপ্রেমীরাও যত্ন করে মুখ দেখবে সেই দর্পণে।
বর্তমান সময়ের পাদপীঠে দাঁড়ানো একজন স্পর্শকাতর হৃদয়ের অধিকারী মানুষের জীবনযাপনের সমুদয় আনন্দ-বিষাদ, গ্লানি-উল্লাস এবং আলো-অন্ধকারকে প্রায় নির্বিচারভাবেই সুনীল তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু করেছেন। নানা রঙে আঁকা ছবির মর্যাদা দিয়েছেন। সেসব ছবিতে বারবার ঘুরেফিরে আসতে দেখেছি আমরা একটি মুখকেই—সে মুখ বঙ্গোপসাগরের মতো বিশালতাময় ভালোবাসা বুকে ধারণকারী এক প্রেমিক কবির মুখ। আর তখনই নতুনভাবে উপলব্ধি করি, সুনীলের এই অন্তহীন এবং কাতর ভালোবাসা শুধু কোনো নারী কিংবা নীরার জন্য নয়, তা একইভাবে আকুল মাটি মানুষ দেশ নিসর্গ ও পৃথিবীর জন্যও। এবং ঘুরেফিরে, এবং বারবার—তাঁর প্রাণের গভীরে আসন বিছিয়ে রাখা রবীন্দ্রনাথের জন্যও। ‘প্রথম আলো’র সুবিস্তৃত পরিসর থেকে ‘রানু ও ভানু’র সংহত অবয়বে সেই ভালোবাসা খোদাই করা আছে কোজাগরী পূর্ণিমার জোছনা দিয়ে।
যেহেতু সুনীল অবিরাম লিখে গেছেন গদ্য-পদ্য দুই-ই, তাই তাঁর হাতে কবিতা কোথাও হয়ে উঠেছে মসৃণ গদ্য, আবার প্রবহমান গদ্য হয়ে উঠেছে কবিতার স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় লাবণ্যময়। বাংলা সাহিত্যের এই দুই শক্তিশালী মাধ্যমের ভাষার মধ্যে বিরাজিত দীর্ঘ দূরত্বকে সুনীল তাঁর একক প্রয়াসেই একেবারে নিকটবর্তী করে রেখে গেলেন। আগামী দিনের সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে কিংবা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এটাই কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্যতম অবদান হিসেবে চিহ্নিত হবে? হয়তো বা।
আর আজকের পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করলে সেই রাগকে তো স্পষ্টতই মনে হয়। চল্লিশের দশকের শেষদিকে এসে ঘটেছিল ঘটনাটি। সুনীলের কণ্ঠে তখন রবীন্দ্রনাথের গান উঠেছে। সেই গান গেয়ে তখন তিনি খানিকটা খ্যাতিও অর্জন করেছেন। মহাজাতি সদনের একটা অনুষ্ঠানে এই সময় তাঁর দলের কাছে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ এলো। যথারীতি প্রস্তুত হয়েই তাঁরা সেখানে গেলেন। মঞ্চে উঠলেন এবং গান গাওয়া শুরু করলেন। হঠাত্ কিছু দর্শক তাদের আসন থেকে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন এবং ক্রমেই তাদের সঙ্গে যোগ দিতে লাগলেন আরও অনেকে। কিন্তু মঞ্চে সুনীলরা তখনও তার কোনো কারণ ধরতে পারছেন না। তাদের গাওয়া গানের কথা ও সুরের মধ্যে কোথাও তো কোনো ভুল নেই। তবে? কিছু বুঝতে না পেরে আরও মনোযোগের সঙ্গে তারা তাদের গান চালিয়ে যেতে লাগলেন। ওদিকে দর্শকরাও সমান তালে চেঁচাচ্ছেন। আগের চেয়ে তারা এখন অনেক বেশি উত্তেজিত। একেবারে মারমুখো। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের কয়েকজন এগিয়ে এসে তাদের অতি দ্রুত পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দিলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের সরে পড়তে বললেন। তারা সবাই হতচকিত এবং হতবিহ্বল। কী তাদের অপরাধ—জানতেই পারলেন না। তবে পরে জেনেছিলেন। গান তারা ঠিকঠাকই গাইছিলেন। কিন্তু তাদের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবির বদলে ছিল শার্ট-প্যান্ট। আর হলের উত্তেজিত শ্রোতা-দর্শকদের কাছে সেটাই ছিল অপরাধ। তাদের বিচারে শার্ট-প্যান্ট পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার অর্থ হলো রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত উভয়কেই অপমান করা। এবং এরাই ছিল তখনকার রবীন্দ্র সাহিত্য ও সঙ্গীতের ধারক, বাহক, রক্ষক। এই সংকীর্ণ ধ্যান-ধারণার রবীন্দ্রপ্রেমীদের সুনীলের মতো মুক্ত মনের মানুষ যে মেনে নিতে পারবেন না—সে তো খুবই স্বাভাবিক।
তবে তাই বলে যে ভাষাভঙ্গিতে কথা বলে গেছেন, কিংবা কবিতা লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ—সে তো সম্পূর্ণই রবীন্দ্রনাথের। প্রতিটি কবি এবং কথাশিল্পীকেই তার নিজস্ব ভাষাভঙ্গি বা স্টাইল তৈরি করে নিতে হবে। গড়ে নিতে হবে নিজস্ব উপলব্ধি ও চেতনার একটা ভিন্ন জগত। দৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য। সঙ্গত কারণেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুনীলের অনেক দূরত্ব।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার মাধ্যমেই পঞ্চাশের দশকের বাংলা, বিশেষত পশ্চিমবাংলার কবিতার একটি নিজস্ব চারিত্র্য গড়ে উঠেছিল। ফলে রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রযুগের কবিতার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই তার পার্থক্যগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁদের কবিতায় কখনোই অমার্জিত কিংবা অশালীন শব্দকে প্রবেশাধিকার দিতেন না। দিতেন না তিরিশের কবিরাও। জীবনানন্দ দাশ তাঁর একটি কবিতায় এ ধরনের কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে তাঁর চাকরিটা খুইয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চাশের দশকে সুনীল ও তাঁর সহযাত্রীরা শালীন আর অশালীন শব্দের মধ্যবর্তী বিভাজন রেখাটিকেই গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানে ঈশ্বরের উপস্থিতি প্রশ্নাতীত। কিন্তু এরা তাকে করে তুললেন প্রশ্নসাপেক্ষ। শুভ সুন্দর ও কল্যাণের মূর্ত বাণীরূপই হলো রবীন্দ্রনাথের কবিতা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর সময়ের ক্ষয়ক্ষতি গ্লানি অবিশ্বাস আর দেশবিভাগের যন্ত্রণায় এদের কবিতা রক্তাপ্লুত। রাজনীতি অথবা ঈশ্বর—কোথায়ও তাদের আস্থা নেই, আশ্রয় নেই। তবে এ যুগের ধূলিধূসর অথবা ঊর্মিমুখর কিংবা নিরাশ্রয়ী জীবনে নারীপ্রেমের মহিমা ও মর্যাদাকে তারা ছোট করে দেখলেন না। কিন্তু সেই দেখার ধরনটিও আবার রবীন্দ্রনাথ থেকে আলাদা। রবীন্দ্রনাথ বরাবরই প্রেমকে জেনেছিলেন হৃদয়ের সামগ্রী। শরীর সেখানে কখনোই মুখ্য হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সুনীল পুষ্পিত নারী শরীরকেই জেনেছেন প্রেমের আধার। সেই শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়েই তাঁর প্রেম সন্ধান করেছে হৃদয়ের এবং সেই শরীর-কামনা কোথাও কোথাও এতই উদগ্র হয়ে উঠেছে যে, সমকালের সংস্কারমৃত-পাঠকরাও তাঁকে এক ‘সকাতর যৌন কামনার কবি’ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। বন্ধু শঙ্খ ঘোষকেও লিখতে হয়েছে—‘সন্দেহ নেই যে তীব্র যৌনতা তাঁর কবিতার অন্যতম বড় ভর।’
যৌনতা এমন একটা মদ, যা খুব সহজেই মাতিয়ে তোলে নারী-পুরুষকে। আর তখনই সুরের মধ্যে ঢুকে পড়ে অসুর। ‘সুন্দর ফিরিয়া যায় অসহ্য লজ্জায় অপমানে।’ কিন্তু সুনীলের কবিতায় আশ্চর্যজনকভাবে সেই ছন্দপতনটি খুব কমই হয়েছে। কামনার মদির গন্ধ ছড়িয়ে সেখানেই থেমে থাকে না তাঁর কবিতা। পৌঁছে যায় হৃদয় মন্থন করা ভালোবাসার এক ঊর্ধ্বলোকে। তাঁর ‘নীরা’ তাই সহজেই হয়ে ওঠে পাঠকদের অতি আদরের মানসসঙ্গী। সময়ের অগ্রগমনের সঙ্গে সঙ্গে কিশোরেরা তরুণ হয়। তরুণেরা যুবক এবং যুবকেরা বৃদ্ধ। নতুন প্রজন্ম এসে জায়গা দখল করে পুরনোর। কিন্তু নীরা একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তার সেই সৌরভময় পুরনো অবস্থানে। একইভাবে আনন্দ ছড়ায়, বেদনা জাগায়, সৌন্দর্য বিলায় এবং মায়ার বিভ্রমে মাতায় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। দেহকে ছুঁয়ে ছুঁয়েই সে দেহাতীত, কালাতীত এবং মরণাতীত।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম— ‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি’। এটি সুনীলের দ্বিতীয় কাব্য। এই কাব্যটিতেই সুনীল তাঁর কাব্যভাবনার নিজস্ব ভিত্তিভূমি রচনা করেছিলেন। খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর কবিযাত্রার সদর রাস্তা। সারাজীবন এই একই রাস্তা ধরে হেঁটেছেন তিনি। আর কখনোই কোনো দিকবদল করেননি। তাই দৃশত একটি কাব্যের নাম হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর সব কাব্য এবং কবিতাই তাঁর বেঁচে থাকার ধরন-ধারণ, অভিজ্ঞতা ও অনুভবের শিল্পিত দলিল।
‘যেমন হওয়া ভাল’ কিংবা ‘যেমন হওয়া উচিত’— রবীন্দ্রনাথের সমগ্র জীবনের সাহিত্য সৃষ্টি এই বোধের আঙিনা থেকে উত্সারিত হয়েছে। তাই এর সঙ্গে মিশে আছে আদর্শবাদের উজ্জ্বল আলো। মিশে আছে কল্যাণ, শুভ ও সৌন্দর্যচেতনার আলোছায়া। কিন্তু সুনীলের যাত্রা ছিল এর ঠিক বিপরীতে। জীবন ও জগতের ব্যাপ্ত পরিসরে ‘যেমন হয়ে থাকে’— রবীন্দ্রনাথ তাঁর সকল ইন্দ্রিয়কে সজাগ রেখে তা দেখেছেন এবং ‘যেমন হওয়া ভালো’র দিকে তাকে পরিচালিত করেছেন। কিন্তু ‘কেমন হওয়া ভালো’ এই বোধ সুনীলকে মোটেই তাড়িত কিংবা চালিত করেনি। তার বদলে তিনি পরিচালিত হয়েছেন ‘যেমন আছি আমি’—তারই বর্ণনায় কবিতাকে শিল্পিত করে তোলার প্রেরণায়। ফলে তাঁর সমুদয় কবিতা হয়ে থাকল তাঁরই আত্মকাহিনীর প্রতিচিহ্ন। আত্মউপলব্ধির ধারাবিবরণী। আর এই পথে নিঃশঙ্ক যাত্রার প্রেরণাটি তিনি পেয়েছিলেন এ্যালেন গিনসবার্গের কাছ থেকে। তাঁর প্রথম কাব্য ‘একা এবং কয়েকজন’ প্রকাশের পর যখন তিনি কবিতাযাত্রার একটা নতুন ও নিজস্ব পথের সন্ধান করছিলেন, তখনই তাঁর হাতে পৌঁছেছিল গিনসবার্গের একটি চিঠি, যাতে লেখা ছিল—“যা কিছু তুমি অনুভব করো, তাকে ঠিক ঠিক বলে যাওয়াটাই হলো কবিতার কাজ, যেখানে থাকবে তোমার সকল রকম স্বীকারোক্তি, সমস্ত রকম অসন্তোষ, সমস্ত রকম উচ্ছলতা। ‘কী তোমার হওয়া উচিত’ সেদিকে কিছুমাত্র লক্ষ্য না রেখে কবিতা আজ জানতে চায় তুমি ঠিক কেমন।”
গিনসবার্গের এই কথাগুলো সুনীলের মনেও ছিল—অর্ধ উচ্চারিত কিংবা অর্ধ জাগর অবস্থায়। চমত্কারভাবে গিনসবার্গ তাকে জাগিয়ে দিলেন। সেই জাগর সত্তা সুনীলকে আর থামতে দেয়নি। তাই তিনি জীবনভর নিমগ্ন থেকেছেন কবিতার সাধনায়—যে কবিতা তাঁরই যাপিত জীবন আর সংকোচহীন স্বীকারোক্তির এক শিল্পিত দলিল। অর্ধশতাব্দীব্যাপী বিস্তৃত একটি যুগের পাঠক আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে দেখলেন, সেসব স্বীকারোক্তি শুধু সুনীল নামের একজন ব্যক্তি মানুষের নয়, একই সঙ্গে তাদের জীবনেরও অনেক অভিজ্ঞতা ও অনুভবের নিকটাত্মীয়। অন্যের দর্পণে যখন নিজের ছায়া ভাসে, তখন সেই দর্পণটির জন্যও জেগে ওঠে এক ধরনের ভালোলাগা, ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার দর্পণ হয়েই সুনীলের কবিতা জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ঘর ও মনে। আগামী প্রজন্মের কবিতাপ্রেমীরাও যত্ন করে মুখ দেখবে সেই দর্পণে।
বর্তমান সময়ের পাদপীঠে দাঁড়ানো একজন স্পর্শকাতর হৃদয়ের অধিকারী মানুষের জীবনযাপনের সমুদয় আনন্দ-বিষাদ, গ্লানি-উল্লাস এবং আলো-অন্ধকারকে প্রায় নির্বিচারভাবেই সুনীল তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু করেছেন। নানা রঙে আঁকা ছবির মর্যাদা দিয়েছেন। সেসব ছবিতে বারবার ঘুরেফিরে আসতে দেখেছি আমরা একটি মুখকেই—সে মুখ বঙ্গোপসাগরের মতো বিশালতাময় ভালোবাসা বুকে ধারণকারী এক প্রেমিক কবির মুখ। আর তখনই নতুনভাবে উপলব্ধি করি, সুনীলের এই অন্তহীন এবং কাতর ভালোবাসা শুধু কোনো নারী কিংবা নীরার জন্য নয়, তা একইভাবে আকুল মাটি মানুষ দেশ নিসর্গ ও পৃথিবীর জন্যও। এবং ঘুরেফিরে, এবং বারবার—তাঁর প্রাণের গভীরে আসন বিছিয়ে রাখা রবীন্দ্রনাথের জন্যও। ‘প্রথম আলো’র সুবিস্তৃত পরিসর থেকে ‘রানু ও ভানু’র সংহত অবয়বে সেই ভালোবাসা খোদাই করা আছে কোজাগরী পূর্ণিমার জোছনা দিয়ে।
যেহেতু সুনীল অবিরাম লিখে গেছেন গদ্য-পদ্য দুই-ই, তাই তাঁর হাতে কবিতা কোথাও হয়ে উঠেছে মসৃণ গদ্য, আবার প্রবহমান গদ্য হয়ে উঠেছে কবিতার স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় লাবণ্যময়। বাংলা সাহিত্যের এই দুই শক্তিশালী মাধ্যমের ভাষার মধ্যে বিরাজিত দীর্ঘ দূরত্বকে সুনীল তাঁর একক প্রয়াসেই একেবারে নিকটবর্তী করে রেখে গেলেন। আগামী দিনের সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে কিংবা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এটাই কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্যতম অবদান হিসেবে চিহ্নিত হবে? হয়তো বা।
আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা কবিতার নতুন পথ আর নতুন
ভাষাভঙ্গির সন্ধানে যে নিঃসঙ্গ যাত্রা শুরু করেছিলেন, পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ
সাধনায় তিনি তাকে পৌঁছে দিয়েছেন উত্কর্ষের বেলাভূমিতে। সেখানে কবিতার
সমুদ্র আর গদ্যের পটভূমি পরস্পরের হাতে হাত রেখে এক অপূর্ব গতি ছন্দ লয় ও
সুরের যুগলবন্দী গেয়ে যাচ্ছে। আর ক্রমাগত পরিচর্যার ফলে দুই ভিন্ন ঘরানা
থেকে একত্রিত হওয়া যুগলও কী চমত্কারভাবে অভিন্ন সত্তা ও শৈলীর অধিকারী হয়ে
উঠতে পারে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার সর্বশেষ দ্যুতিময় উদাহরণটি রেখে গেলেন এ
বছরের শারদীয় ‘আমার সময়’ পত্রিকায়—‘কবিতার গল্প কিংবা গল্পের কবিতা’
শিরোনামের পৌনে চারশো পঙিক্তর এক অপূর্ব কবিতায়। একদিকে দুর্বার
প্রেমাকাঙ্ক্ষা, অপরদিকে অঙ্কুশবিদ্ধ অপরাধবোধ—এই দুই ভিন্ন অনুভূতির
টানাপোড়েনে গড়ে ওঠা এই দীর্ঘ কবিতার সমগ্র পরিসরে বেলোয়ারি চুড়ির টুংটাং আর
কাঁঠালি-চাঁপার সুগন্ধ ছড়ানো আছে। আর তাতেই জুড়িয়ে যায় দীর্ঘ কবিতা পাঠের
সব ক্লান্তি। মন ভরে ওঠে প্রেমের মোহমদিরায়। কবিতার মাধ্যমে গল্প বলা—সে তো
প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে। কিন্তু একটি অনুপম কবিতা নিজেই যখন হয়ে ওঠে
এক অনবদ্য গল্প অথবা বিপরীত বিচারে—একটি নিটোল গল্প শুধু ভাষাশৈলীর কারণে
নিজেই হয়ে ওঠে শরত্ আকাশের সাদা মেঘের মতো কোমল সজল এবং নির্ভার কবিতা, তখন
আমাদের চেতনা এবং অনুভবে জেগে ওঠে বিস্ময়বোধের প্লাবন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
তাঁর এই বেলাশেষের উপহারে আমাদের অনেকটা বিমূঢ়ের মতোই দাঁড় করিয়ে রেখে
গেলেন সেই বিস্ময়ের প্লাবনভূমিতে—কবিতাই গল্প, আবার গল্পই কবিতা।
No comments:
Post a Comment